ইতিহাস

History
সবুজ প্রকৃতি ঘেরা এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত গাইবান্ধা পৌরসভা। ঘাঘট নদীর বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে পৌরসভার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে। শুধু সৌন্দর্যই নয়, এর ইতিহাসও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ১৮৭৫ সালে এই শহরের গোড়াপত্তন হয়। এর আগে গাইবান্ধা নামে কোন শহর ছিল না।
১৯০১ সালে গাইবান্ধা শহরের আয়তন ছিল ২ দশমিক ৩৩ বর্গমাইল এবং লোক সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৩৫ জন। বর্তমান গাইবান্ধা শহরের স্থানটি তৎকালীন বাহারবন্দ ও মুক্তিপুর পরগণাভূক্ত ছিল। বাহারবন্দ পরগনাভূক্ত পৌর এলাকাটি আদিতে ছিল কাশিম বাজারের কৃষ্ণনন্দীর স্ত্রী মহারানী স্বর্ণময়ীর আওতাধীন জমিদার মনিন্দ্র নন্দীর জমিদারীতে। আর মুক্তিপুর পরগণাভূক্ত পৌর এলাকার অংশটুকু ছিল থানসিংহপুরের জমিদার লাহিড়ীর পরিবারভূক্ত।
জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, শহরের বর্তমান ডিবি রোডটি ছিল দুই পরগনা ও দুই জমিদারের সীমানা। বিডি রোডের দক্ষিণ দিক হচ্ছে মুক্তিপুর পরগনা ও উত্তরদিক হচ্ছে বাহারবন্দ পরগনা।
১৯২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাইবান্ধা শহর এলাকায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু ছিল। গাইবান্ধার সর্বশেষ পঞ্চায়েত ছিলেন বাবু কাজী। তিনি অতি নগন্য সংখ্যক শহরবাসীর কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন একজন কর্মচারীর মাধ্যমে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সময়কালে সর্বশেষ আদায়কারী ছিলেন মন মোহন পন্ডিত।
এদিকে বৃটিশ সরকার পৌর প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করলে ১৮৯৩ সালে পঞ্চায়েতের পরিবর্তে পৌর প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয়।
সে সময় গাইবান্ধা শহরে পৌর প্রশাসন অর্থাৎ মিউনিসিপ্যালেটি প্রতিষ্ঠার দাবীতে ১৯১৬ সালে গাইবান্ধার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনে তৎকালীন মহকুমা শহরের যেসব ব্যক্তিরা আন্দোলন করেন,তারা হলেন, আহম্মদ জান খান, মহিউদ্দিন খান, মৌলভী সেফায়েত উদ্দিন আহমেদ, শাহাদৎ আলী খান, খান বাহাদুর আব্দুল মজিদ, ফজলার রহমান, তসলিম উদ্দিন খান, সিরাজ উদ্দিন খান, বেনী মাধব দাস, গুন মোহন দাস, অয়েন উদ্দিন, কিশোরী বল­ভ চৌধুরী, অন্ধিতা চরণ ঘোষ, প্রফুল্ল­ কুমার বিশ্বাস, জিতেন্ত্র নাথ রায়,রাধা বিনোধ চৌধুরী, আবু হোসেন সরকার, আব্দুল করিম, তমিজ উদ্দিন, শেখ শাহ মোহাম্মদ আলী, জ্ঞানদা প্রসাদ নাগ, নৃপতি চরণ দাস, রাজেশ্বরী বাগচী, হাফিজার রহমান, মোবারক উল্যা সরকার, সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, নিবারণ চন্দ্র কর, মেহের উদ্দিন আহমেদ, দেবেন্দ্র নাথ রায়, অন্নদা প্রসাদ দাস, তালেব উদ্দিন, ঈশান চন্দ্র দেব, ভোগিরথ চন্দ্র, সারদা গোবিন্দ চাকী প্রমুখ। এছাড়া নাম না জানা আরো অনেকে আছেন যারা আন্দোলন করেছিলেন।
গাইবান্ধা বাসীর এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অবশেষে ১৯২৩ সালের ১লা অক্টোবর বৃটিশ সরকার গাইবান্ধা পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে। শহরের ২ দশমিক ৩৩ বর্গমাইল এলাকা মিউনিসিপ্যালেটির অর্ন্তভূক্ত হয়।
সাবেক পুরাতন হাসপাতাল ভবনটিতে সর্ব প্রথম গাইবান্ধা মিউনিসিপ্যালেটির কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় (১৯২৩) সালে গাইবান্ধা শহরের লোক সংখ্যা ছিল ৮ হাজার এবং মিউনিসিপ্যালেটির জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ৬৩৫ জন।
১৯২৪ সালে মিউনিসিপ্যালেটির অফিস বর্তমান সোনালী ব্যাংকের নীচ তলায় স্থানান্তর করা হয়। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত এই মিউনিসিপ্যিালেটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। গাইবান্ধা পৌরসভার বর্তমান ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৩৪ সালে।
তৎকালীন রংপুরের জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এন এম আয়ার ১৯৩৪ সালের ১৮ এপ্রিল পৌরসভার অফিস ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ভবনটি নির্মাণ করেন প্রকৌশলী মনিন্দ্র নাথ মজুমদার। ১৯৩৭ সালের ২৩ মার্চ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। ঐ সালেই দ্বারোদঘাটন করেন তৎকালীন ইংরেজ বিভাগীয় কমিশনার এল, আর, ফোকাস।
সেদিন থেকে পৌরসভার বর্তমান ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এদিকে গাইবান্ধা পৌরসভার প্রথম প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন বিনোদ বিহারী সরকার। ১৯২৬ সালে তৎকালীন মিউনিসিপ্যালেটি গঠনের বিধান মোতাবেক সরকার মনোনীত ১০ জন মেম্বার এবং একজন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট প্রতিনিধি নিয়ে মিউনিসিপ্যালেটির প্রথম কমিটি গঠন করা হয়।
নবগঠিত কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন, খান বাহাদুর আব্দুল মজিদ, দেবেন্দ্রনাথ রায়, মোঃ হামিদ উদ্দিন খান, মৌরভী মোঃ লুৎফর রহমান, মোবারক উল্যা সরকার, গুণ মোহন দাস, জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ নাগ, বেনী মাধব দাস, হরদাস রায় ও ভীম চন্দ্র বর্মণ এবং রংপুর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট প্রতিনিধি হিসাবে কমিটিতে যুক্ত হন এ, ই, ব্যাটলেট। নবগঠিত গাইবান্ধা মিউনিসিপ্যালেটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৬ সালের ১৭ জুলাই এ. ই. ব্যাটলেটের সভাপতিত্বে। সভায় বেনী মাধব দাস এর প্রস্তাবক্রমে এবং গুণ মোহন দাসের সমর্থনে দেবেন্দ্র নাথ রায় প্রথম চেয়ারম্যান নির্বঅচিত হন। এছাড়া ভীম চন্দ্র বর্মণের প্রস্তাবক্রমে জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ নাগের সমর্থনে হামিদ উদ্দিন খান প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
১৯২৬ সালের ২১ জুলাই গাইবান্ধা মিউনিসিপ্যালিটির নবগঠিত কমিটির প্রথম চেয়ারম্যান দেবেন্দ্রনাথ রায়ের সভাপতিত্বে একটি সভায় মিলিত হন, এবং শহরের ২০টি সড়ক উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০টি সড়ক উন্নয়নের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। এর মধ্যে উল্লে­খযোগ্য সড়কগুলোর বরাদ্দ ছিল কালিবাড়ি রোড বরাদ্দ ২৫০ টাকা, সার্কুলার রোড ২০০ টাকা, সাদুল্যাপুর সড়ক ৩২ টাকা, গোডাউন রোড ৪৮ টাকা, ষ্টেশন রোড ২০০ টাকা, হাসপাতাল লেন ৬০ টাকা, স্কুল লেন ৬০ টাকা এবং কোমারনই সড়কের বরাদ্দ ছিল ৪২ টাকা মাত্র।
১৯২৬ সালে যখন মিউনিসিপ্যালেটির কমিটি গঠন হয় তখন গাইবান্ধা শহরের জনসংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৮৬৮ জন। এসময় মিউনিসিপ্যালেটির তত্তাবধানে শহরের পুরাতন হাসপাতাল সংলগ্ন মাতৃসেবা সদনটিতে একটি চেরিটেবল ডিসপেনসারি পরিচালিত হতো। যার দায়িত্ব প্রাপ্ত ডাক্তার ছিলেন বিনোদ কুমার গুহ এবং এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য পৌরসভার বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা।
১৯২৭ সালের মে মাসে ৫০ টাকা বেতনে কালিদাস চক্রবর্তীকে ওভারশিয়ার এবং প্রথমে কলকাতার তারা নাথ মুখার্জী ও পরে জলপাইগুড়ির ওমর আলী খানকে সেনিটারী ইন্সপেক্টর নিয়োগ করা হয়।
১৯২৭ সালের মার্চ মাসে সরকারী সিদ্ধান্ত মোতাবেক গাইবান্ধা পৌরসভার (গেজেট নোটিফিকেশন নং ৬২৮, তাং ১৮.০২.১৯২৭) গাইবান্ধা মহকুমা শহরের হাসপাতালটি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলেন মহকুমা প্রশাসক, মহকুমা মেডিক্যাল অফিসার, হামিদ উদ্দিন খান, খান বাহাদুর আব্দুল মজিদ, বেনি মাধব দাস, হরিদাশ রায়, জিতেন্দ্রনাথ রায়, মহিম চন্দ্র, রাজচন্দ্র প্রসাদ সরকার।
১৯২৭ সালের জানুয়ারী মাসে রংপুরের তাজহাটের জমিদার গোবিন্দ লাল রায়ের দানকৃত জমিতে বর্তমান পৌর পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয় হরোগোবিন্দ পার্ক নামে। সে সময় পার্ক তত্তাবধানের জন্য আলাদা একটি কমিটি ছিল। পরে ১৯২৭ সালের জুন মাসে পার্কটি মিউনিসিপ্যালেটি কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়, পার্কের জমাকৃত ১ হাজার ৫০০ টাকা সহ। মিউনিসিপ্যাল কমিটি ১৯২৭ সালের ২রা জুলাই এক সভায় বিষয়টি অনুমোদন করেন। পরে পার্কের জন্য ১২ টাকা মাসিক বেতনে একজন মালি নিয়োগ গৃহীত হয়।
১৯২৭ সালের ৫ই নভেম্বরের সভায় পৌর কবরস্থান প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কবরস্থানের জন্য ৫ থেকে ১০ বিঘা পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১৯২৮ সালের ডিসেম্বর মাসে গাইবান্ধা পৌরসভা ১৮টি সড়ক উন্নয়নের জন্য ব্যয় করে ১ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে পলাশবাড়ি সড়ক উন্নয়নে ব্যয় করা হয় ৮ টাকা, ব্রীজ রোডের ৪৮ টাকা এবং ঘাঘট নদীর পার্কের সড়ক নির্মাণে ব্যয় করা হয় ১২ টাকা।
১৯২৬ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত গাইবান্ধা পৌরসভার কমিটি মিটিংয়ে যে সমস্ত রেজুলেশন লেখা হতো তা চেয়ারম্যানরা স্বহস্তে লিখতেন ইংরেজীতে। এছাড়া সে সময় কমিটির মিটিং হতো অনেক বেশী। কোন কোন মাসে ৪ থেকে ৫টি মিটিং হয়েছে। এবং ২ থেকে ৩ দিনের ব্যবধানে মিটিং করেছেন চেয়ারম্যান মেম্বাররা।
সে সময় মহামারি আকারে কলেরা ও বসন্ত দেখা দিত। সেজন্য পৌরসভা কমিটি শহরের অনেক স্থানে অস্থায়ী বসন্ত ও কলেরা ওয়ার্ড স্থাপন করেছিলো। তখন শহরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য অনেক স্থানে ইন্দ্রারা স্থাপন করা হয়েছিল। এই ইন্দ্রারাগুলো পরে বেদখল হয়ে গেছে।
১৯৩৭ সালে যখন নতুন ভবনে গাইবান্ধা পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হয় তখন পৌরসভার বোর্ড অব কমিশনার্সে যারা ছিলেন। তারা হলেন চেয়ারম্যান দেবেন্দ্র নাথ রায়, ভাইস চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও সেফায়েত উদ্দিন আহমেদ, মেম্বার গুন মোহন, খান সাহেব, মৌলভী হামিদ উদ্দিন খান, মোবারক উল্যা সরকার, নিবারণ চন্দ্র কর, প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস, রাজচন্দ্র বরমা রায় চৌধুরী ও শারদা গোবিন্দ চাকী।
মিউনিসিপ্যাল প্রশাসন ব্যবস্থার সময়কালে বৃটিশ আমলেই গাইবান্ধা সারা ভারত বর্ষে সর্বাধিক পরিচিত হয়ে ওঠে এবং খ্যাতি অর্জন করে।
কারণ ১৯৩৮ সালে গাইবান্ধায় “অল বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল চেয়ারম্যান কনফারেন্স” অনুষ্ঠিত হয়। মায়া সিনেমা হলে চেয়ারম্যানদের এই কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় এবং এই কনফারেন্স তৎকালীন ভারতের পশ্চিম বাংলা ও পূর্ব বাংলার সকল চেয়ারম্যানরা অংশগ্রহণ করেন।
সেই সময় গাইবান্ধা মিউনিসিপ্যালেটির চেয়ারম্যান ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মায়া সিনেমা হলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী (তৎকালীন) ডাঃ হাফিজার রহমান তখন ছিলেন মিউনিসিপ্যালেটির নির্বাচিত মেম্বার। তার ব্যবস্থাপনায় মায়া সিনেমা হলে ঐতিহাসিক সেই চেয়ারম্যানদের কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়। যা বৃটিশ ভারতে গাইবান্ধাকে পরিচিত করে তুলে ছিল।
১৯৬০ সালের ১ লা জুন মিউনিসিপ্যাল প্রশাসন ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়। এবং গাইবান্ধা টাউন কমিটি নামে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। টাউন কমিটি হবার পর প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে গাইবান্ধা টাউন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন শামছুল আলম। এরপর দেশ স্বাধীন হয় ৭১ সালে। স্বাধীন দেশে টাউন কমিটি বিলুপ্ত হয়।
১৯৭৩ সালে টাউন কমিটির পরিবর্তে গঠিত হয় গাইবান্ধা পৌরসভা। ১৯৭৪ সালে গাইবান্ধা পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন খন্দকার আজিজার রহমান। তিনি ঐ সালের ১লা মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশে গাইবান্ধা পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় গাইবান্ধা পৌরসভা ছিল তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভা।
এরপর মোহাম্মদ খালেদ নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গাইবান্ধা পৌরসভা ১৯৮১ সালের ৩১শে জানুয়ারী দ্বিতীয় শ্রেনীর পৌরসভায় উন্নীত হয়।
১৯৩০ সালে গাইবান্ধা পৌরসভার আয়-ব্যয়ের বাজেট ছিল ১৫ হাজার টাকা। পরে টাউন কমিটির সময় কালে অর্থাৎ ১৯৬৪-৬৫ অর্থ বছরে সাবেক পাকিস্তান আমলে আয়-ব্যয়ের বাজেট ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৫ টাকা। সবশেষে গাইবান্ধা পৌর পরিষদ অর্থাৎ ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে আয় ব্যয়ের বাজেট দাঁড়ায় ১ কোটি ৭৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এই বাজেটে সমাপনী স্থিতি দেখানো হয়েছে ৩২ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯২ টাকা।
জনশ্রুতি মতে, গাইবান্ধা পৌরসভা ভবন সংলগ্ন যে পুকুর রয়েছে তার নাম জুবলি ট্যাংক। এই পুকুর ও পার্শ্ববর্তী জমিগুলো তৎকালীন জমিদার ১৯৩০ সালে পৌরসভাকে দান করেছিলেন মহিলাদের একটি পার্ক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য।
গাইবান্ধা পৌর এলাকায় বিভিন্ন চেয়ারম্যানের সময়কালে স্মরণযোগ্য যে সমস্ত উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী কাজ হয়েছে সেগুলো হচ্ছে চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানের সময়কালে ১৯৬২ সালে শহরে টেলিফোন চালু হয়। চেয়ারম্যান শামসুল আলমের আমলে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয় এবং ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠিত হয়।
চেয়ারম্যান বরদা নাথ চাকীর আমলে ১৯৬০ সালে শহরের ষ্টেশন রোডস্থ নিউ মার্কেট নামে পৌরবাজার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বরদা নাথ চাকী মিউনিসিপ্যালেটির এবং শাহ কফিল উদ্দিন টাউন কমিটির সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া পর পর দু’বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন বরদা নাথ চাকী এবং আব্দুর রশিদ সরকার (সাবেক এমপি)। এরপর চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন ওয়াহেদুজ্জামান খান তিতু এবং সর্বশেষ ১৯৯৯ সালের ২৫শে মার্চ থেকে চেয়ারম্যান পদে আনোয়ার উল হাসান সবুর নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
মিউনিসিপ্যালেটি থেকে পৌরসভা পর্যন্ত যে ক’জন ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে মোহাম্মদ খালেদ হচ্ছেন একমাত্র ভাইস চেয়ারম্যান যিনি পৌরবাসীদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
কেননা ১৯২৬ সালে থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত যারা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা তৎকালীন বিধি মোতাবেক নির্বাচিত ও মনোনীত কমিশনারদের ভোটে নির্বাচিত হতেন।

তথ্য সূত্র: আবু জাফর সাবু সম্পাদতি ও ওয়াহিদুজ্জামান খান তিতু কর্তৃক প্রকাশিত পৌরসভার স্মারক সংকলন ‘গাইবান্ধার পৌর পরিক্রমা’, গাইবান্ধার চারটি পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারিদের সমন্বয়ে গঠিত গাইবান্ধা জেলা পৌর কর্মকর্তা কর্মচারি সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম এবং পৌরসভাগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য।]